প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান থেকে সব ধরনের পণ্য আমাদানি নিষিদ্ধ করেছে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাতীয় নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
শনিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “এখন থেকে আর সরাসরি কিংবা ঘুরপথে পাকিস্তান থেকে কোনো পণ্য আমদানি করার অনুমোদন দেওয়া হবে না। জাতীয় নিরাপত্তাজনিত কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। পরবর্তী আদেশ না আসা পর্যন্ত এই আদেশ কার্যকর থাকবে।”
জম্মু-কাশ্মিরের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলাকে ঘিরে সৃষ্ট উত্তেজনার আবহে পাকিস্তানের প্রতি এই বিরূপ পদক্ষেপ নিলো ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলা চালায় কাশ্মিরভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বার উপশাখা দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট।
স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়ে হামলাকারীরা অন্তত ২৬ পর্যটককে গুলি করে হত্যা করে, আহত হন আরও বেশ কয়েকজন। নিহতরা সবাই পুরুষ। বস্তুত, ২২ এপ্রিলের হামলা ছিল ২০১৯ সালের পুলোয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মিরে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা।ভয়াবহ এই হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত এবং তাৎক্ষণিকভাবে সিন্ধু নদের পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত, দূতাবাস থেকে কূটনীতিকদের ফিরিয়ে আনা, ভারতে অবস্থানরত পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিলসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয় নয়াদিল্লি।
এদিকে পেহেলগামের হামলার সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করে ইসলামাবাদ। তবে নয়াদিল্লির শাস্তিমূলক পদক্ষেপের পাল্টা জবাব হিসেবে ভারতের জন্য নিজেদের স্থল ও আকাশসীমা বন্ধ, পাকিস্তানে অবস্থানরত ভারতীয়দের ভিসা বাতিল, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য স্থগিত, সীমন্ত বন্ধসহ একাধিক পদক্ষেপ নেয় পাকিস্তানও।
পাকিস্তান থেকে অবশ্য খুব বেশি পণ্য যায় না ভারতে। তবে এতদিন ঘুরপথে দুবাই হয়ে পোশাক, মশলা বা ছোটো যন্ত্রাংশের মতো কিছু পণ্য যেতো সেখানে। বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ঘুরপথেও যেন কোনো পাকিস্তানি পণ্য ভারতে প্রবেশ করতে না পরে, সেজন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছে ভারতের সরকার।বস্তুত, ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় জঙ্গিহানার পর থেকে ভারত এবং পাকিস্তানের বাণিজ্যিক সম্পর্কে ক্রমশ অবনতি হতে শুরু করেছিল। ওই সময়ে ফল, সিমেন্ট, পেট্রোপণ্য, আকরিক-সহ পাকিস্তান থেকে আসা বেশ কিছু পণ্যের উপর আমদানি শুল্ক ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছিল ভারত। বাণিজ্যিক ভাবে ভারতের অন্যতম পছন্দের দেশ (মোস্ট ফেভার্ড নেশন)-এর তালিকা থেকেও পাকিস্তানকে সরিয়ে দিয়েছিল ভারত।তার পর থেকে গত কয়েক বছরে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও তলানিতে ঠেকেছে। গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের জানুয়ারির মধ্যে পাকিস্তান থেকে মাত্র ৪ লাখ ২০ হাজার ডলারের পণ্য আমদানি করেছে ভারত। এক বছর আগেও যে পরিসংখ্যান ছিল, তার চেয়ে ২০ লাখ ডলারেরও কম মূল্যের আমদানি হয়েছিল ওই সময়ে।
বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন